5. ফুলগাছের জন্য আদর্শ মাটি কী ধরনের?

ফুলগাছের সুস্থ বৃদ্ধি এবং পর্যাপ্ত ফুল ফোটাতে হলে মাটির গুণমান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আদর্শ ফুলের মাটি হতে হবে জলধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন, কিন্তু অতিরিক্ত জল জমে থাকবে না এমন। এর জন্য বেলে-দোঁআশ মাটি সেরা, যেখানে ৪০% বালি, ৩০% দোঁআশ, এবং ৩০% জৈব সার বা কম্পোস্ট ব্যবহার করা উচিত। আপনি চাইলে নার্সারি থেকে প্রস্তুত potting mix কিনতেও পারেন। মাটির মধ্যে cocopeat, neem cake এবং bone meal মেশালে আরও ভালো ফল পাবেন। এই মাটির কাঠামো ফুলগাছের শিকড় ভালোভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।

6. ফুলগাছে কীট ধরলে কী ধরনের স্প্রে ব্যবহার করব?

ফুলগাছে কীট ধরলে প্রথমেই বুঝতে হবে কোন ধরণের পোকা বা রোগ হয়েছে। সাদা-মাছি, এফিড, থ্রিপস ইত্যাদি হলে নিম তেল (Neem Oil) স্প্রে সবচেয়ে কার্যকর। প্রতি লিটার জলে ৫-১০ মিলি নিম তেল ও কয়েক ফোঁটা লিকুইড সাবান মিশিয়ে গাছে স্প্রে করুন। সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করুন। ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকজনিত রোগ হলে ট্রাইকোডার্মা বা কার্বেনডাজিম জাতীয় ফাঙ্গিসাইড ব্যবহার করা যেতে পারে। রাসায়নিক স্প্রে ব্যবহারের আগে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং সকালের দিকে স্প্রে করুন। প্রয়োজনে ঘরোয়া সমাধানও ব্যবহার করতে পারেন যেমন রসুন-লঙ্কা পানি স্প্রে।

7. ফুলগাছ দ্রুত বাড়ানোর উপায় কী?

ফুলগাছ দ্রুত বাড়াতে হলে গাছের জন্য সঠিক আলো, পানি, সার এবং পরিচর্যার সমন্বয় রাখতে হবে। প্রথমে নিশ্চিত করুন যে গাছ পর্যাপ্ত সূর্যালোক পাচ্ছে (দিনে ৫-৬ ঘণ্টা)। এরপর প্রতি ১৫-২০ দিনে একবার জৈব সার বা ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করুন। নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার ও শুকনো পাতা ছেঁটে ফেলা দরকার। গাছের গোঁড়ায় গুচ্ছ করে নিমপাতা গুঁড়ো দিলে মাটি পোকামুক্ত থাকে। এছাড়াও, গাছের শাখা ছাঁটাই করলে নতুন শাখা তৈরি হয়, যা গাছকে দ্রুত বাড়াতে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম-বোরন জাতীয় liquid tonic ব্যবহার করলেও উপকার পাওয়া যায়।

8. ফুলগাছে ফলন বাড়াতে কী করব?

ফুলগাছে অধিক ফুল পেতে হলে মূলত গাছের পুষ্টি ও পরিচর্যার দিকে নজর দিতে হবে। পটাশ এবং ফসফরাসসমৃদ্ধ সার যেমন DAP, Super phosphate বা Banana peel liquid ব্যবহার করুন। নিয়মিত জৈব সার যেমন ভার্মিকম্পোস্ট, গোবর সার, ও খৈল জলের ব্যবস্থাও ফলন বাড়াতে সাহায্য করে। গাছের পাতা হলুদ হয়ে গেলে Iron বা Magnesium sulfate স্প্রে ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত পানি বা সার না দিয়ে নির্ধারিত ব্যবধানে গাছ পরিচর্যা করুন। ফুলের কুঁড়ি আসার সময় নিয়মিত ছাঁটাই করলে এবং সঠিক আলো দিলে ফলন বাড়ে।

9. ফুলগাছের জন্য কোন সিজন সবচেয়ে ভালো?

বিভিন্ন ফুলের জন্য বিভিন্ন ঋতু উপযোগী হলেও সাধারণভাবে বসন্ত এবং শীতকাল ফুলগাছের জন্য সবচেয়ে উপযোগী সময়। শীতে রোদ থাকে কিন্তু গরম কম, তাই ফুলগাছ ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়। বসন্তে আবহাওয়া মৃদু ও আদ্র হওয়ায় ফুলের পরিমাণ বেড়ে যায়। গ্রীষ্মকালে রোদের তাপে কিছু ফুল শুকিয়ে যায়, তাই তখন শীতল ছায়াযুক্ত জায়গা বেছে নেওয়া ভালো। বর্ষাকালেও কিছু জাতের ফুল যেমন জবা বা টগর ভালো হয়, তবে জলাবদ্ধতা রোধ করতে হবে। সঠিক সময়ে বপন এবং পরিচর্যার মাধ্যমেই সেরা ফুল ফোটানো সম্ভব।

10. টবে ফুলগাছ লাগানোর সঠিক নিয়ম কী?

টবে ফুলগাছ লাগাতে হলে প্রথমেই উপযুক্ত টব বেছে নিতে হবে – সাধারণত ৮–১২ ইঞ্চি গভীর টব যথেষ্ট। টবের নিচে ড্রেনেজ হোল থাকা বাধ্যতামূলক যাতে অতিরিক্ত জল বের হয়ে যেতে পারে। এরপর নিচে কিছু ইটের টুকরা বা কাঁচ দিয়ে ঢেকে তার ওপর সঠিক অনুপাতে মাটি, বালি, ও জৈব সার দিয়ে মিক্স তৈরি করতে হবে। গাছ রোপণ করার পর অল্প জল দিতে হবে, অতিরিক্ত নয়। প্রতি ১৫–২০ দিনে একবার liquid fertilizer ব্যবহার করুন এবং ১–২ মাস পর পর মাটি খুঁচিয়ে দিন। টব এমন স্থানে রাখুন যেখানে আলো-বাতাস ভালো আসে।

আরও জানতে পড়ুন: ফুলগাছের আলো, পানি ও মাটি নিয়ে বিস্তারিত

← আগের পেজ পরের পেজ →